নড়াইলের লোহাগড়ায় উপজেলা নির্বাচন-পরবর্তী আধিপত্য বিস্তারের সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার দুপুরে উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের নোয়াগ্রামে এই সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। গত ২৪ মার্চ এই উপজেলায় নির্বাচন হয়েছিল।
নিহত ব্যক্তি হলেন কুয়েতপ্রবাসী সৈয়দ মিজানুর রহমান (৪৫)। তিনি ওই গ্রামের সৈয়দ সিদ্দিক আলীর ছেলে। এক মাস আগে তিনি বাড়ি আসেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা বুলবুল শেখ জানান, মিজান কুয়েত শাখা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
আহত ব্যক্তিরা হলেন সৈয়দ বাকি আলী, সৈয়দ সেলিম, সৈয়দ সাচ্চু, সৈয়দ নওশের, রাসেল আলী, শওকত হোসেন ও নীরব আলী। তাঁদের নড়াইল ও যশোর সদর হাসপাতালে এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত সবাই নিহত ব্যক্তির পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
গ্রামবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে থেকেই ওই গ্রামে দুটি পক্ষ ছিল। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন ওই গ্রামের বাসিন্দা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুল আমির এবং অন্য পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন ওই গ্রামের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য বুলবুল শেখ। বুলবুল শেখ উপজেলা নির্বাচনে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিকদার আবদুল হান্নানের পক্ষে ছিলেন।
এলাকাবাসী জানান, নির্বাচনে শিকদার আবদুল হান্নানের কাছে সৈয়দ ফয়জুল আমির পরাজিত হন। এ নিয়ে নির্বাচনের পর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। দুই দিন আগে সৈয়দ মিজানুর রহমানের সঙ্গে প্রতিপক্ষের ত্রাণ কাজীর কথা-কাটাকাটি হয়। এতে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে আজ ভোরে দুই পক্ষ সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। পুলিশ গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করে। পরে বেলা দুইটার দিকে প্রতিপক্ষের হামলায় ঘটনাস্থলেই মিজান নিহত হন।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য বুলবুল শেখ বলেন, ‘দুপুরে প্রতিপক্ষের ৫০-৬০ জন মিজানের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাঁকে খুন করেছে।’
অভিযুক্ত পক্ষ সৈয়দ ফয়জুল আমিরের ভাতিজা গ্রামের মাতবর সৈয়দ মাসুম রেজা বলেন, ‘ভোরে আমার বাড়িসহ আরও কয়েকটি বাড়িতে প্রতিপক্ষ হামলা করে। এতে উত্তেজনা বেড়ে যায়। দুপুরে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হলে মিজান সামনের দিকে থাকায় তাঁর এই অবস্থা হয়েছে।’
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘সকালে কয়েকটি বাড়িতে হামলার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। মীমাংসার জন্য বিকেলে দুই পক্ষের থানায় বসার কথা ছিল। সৈয়দ ফয়জুল আমির পক্ষের লোকজন ভেতরে-ভেতরে প্রস্তুতি নিয়ে অতর্কিত হামলা করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। নিহত মিজানের মাথায় কোপ ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
সূত্র, প্রথম আলো